fbpx
বায়োডাটা লেখার নিয়ম, জীবন বৃত্তান্ত লেখার নিয়ম, CV, Resume

বায়োডাটা লেখার নিয়ম, জীবন বৃত্তান্ত লেখার নিয়ম, CV, Resume

Last Updated on January 26, 2023 by Engineers

বায়োডাটা লেখার নিয়ম, জীবন বৃত্তান্ত লেখার নিয়ম, CV, Resume

 

একজন চাকরিপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে সুন্দরভাবে পরিচয় করানোর প্রথম সুযোগ হচ্ছে বায়োডাটা (Biodata)। কিন্তু এই বায়োডাটা সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে পারার ব্যার্থতায় অনেক যোগ্যব্যক্তি চাকরিপ্রাপ্ত হয় না। তাই বুঝতেই পারছেন বায়োডাটা লেখার নিয়ম অনুসরণ করে বায়োডাটা বা জীবনবৃত্তান্ত সঠিকভাবে প্রস্তুত করা কতটা জরুরি।

বায়োডাটা (Biodata) শব্দের অর্থ জীবন বৃত্তান্ত। বায়ডোাটা শব্দটির পরিবর্তে রেজুমে (Resume) এবং সিভি (CV) অর্থাৎ কারিকুলাম ভিটা (Curiculum Vita) দুটি শব্দ ব্যবহার করা হয়। সিভির পরিবর্তে রেজুমে শব্দটি প্রয়োগ করা হলেও কারিকুলাম ভিটা কিন্তু প্রায়োগিক অর্থে রেজুমে বা সিভি নয়। যদিও সিভি এবং রেজুমে শব্দ দুটি একই উদ্দেশ্য সাধন করে, দুটোই নিয়োগকর্তার কাছে একজন আদর্শ প্রার্থীর যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। এদের পার্থক্য মূলত গঠন, বিবরণ, দৈর্ঘ্য এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে। নিম্নে বায়োডাটা লেখার নিয়ম বা বায়োডাটায় কি কি বিষয় থাকলে আকর্ষণীয় হবে সেগুলো আলোচনা করা হল।

* শিরোনাম (Title)

বায়োডাটার নিয়ম এ title বলতে একদম শুরুর অংশকে বোঝায় যেখানে চাকরিপ্রার্থীর সম্পূর্ণ নাম বোল্ড (bold) করে উল্লেখ করতে হবে। তারপর ঠিকানা দিতে হবে। বায়োডাটায় এমন ঠিকানা দিতে হবে যেখানে চিঠি দিলে আপনি সেটা পাবেন। এর সাথে দিতে হবে আপনার মোবাইল নাম্বার এবং ই-মেইল এড্রেস। এই অংশটি বায়োডাটায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, তাই এটি সঠিকভাবে লিখতে হবে।

* পেশাগত লক্ষ্য (Career Objective)

এই অংশে আপনি কোম্পানিকে কি দিতে পারবেন সেটার উপর গুরুত্ব আরোপ করে লিখতে হবে। আপনি কোম্পানি থেকে কি আশা করেন তার ওপর  নয়। এক্ষেত্রে বর্তমান চাকরি নিয়ে আপনার লক্ষ্য এবং কোম্পানিকে আপনি আপনার দক্ষতার মাধ্যমে কি দিতে পারবেন সেটা লিখতে হবে। এইভাবে লিখতে পারেন :- Dedicated to work in a challenging and competitive environment in an organization where I will be entrusted with greater responsibility and strategic decision making authority, self-driven and highly motivated.

এই অংশে ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার লক্ষ্য, আপনার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরবেন।

* বিশেষ যোগ্যতা (Special Qualification)

বিশেষ যোগ্যতা বা অতিরিক্ত যোগ্যতা, এই অংশে শিক্ষাগতযোগ্যতা ছাড়া আপনার অন্যান্য যোগ্যতাসমূহ উল্লেখ করতে হবে। বিশেষ যোগ্যতা চাকরি পাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে থাকে। অতিরিক্ত যোগ্যতায় যদি আপনি তেমন বেশি পারদর্শী না হন নতুন হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে এই অংশ শিক্ষাগত যোগ্যতার পরে দিয়ে দিতে পারেন। বিশেষ যোগ্যতা গুলো এমন হয়ে থাকে, Computer Skill, Universal Testing Machine, ERP Softwer Operating ইত্যাদি যে কাজ গুলো আপনি ভালো জানেন বা আপনি যেগুলোতে পারদর্শী মনে করেন।

* কর্মসংস্থান ইতিহাস (Employment History)

কর্মসংস্থান ইতিহাস হলো পূর্ববর্তী কাজের বিস্তারিত বর্ননা। চাকরিতে যোগদান করার পর বর্তমান সময় পর্যন্ত আপনি কোন কোন কোম্পিানিতে কাজ করেছেন এবং সেই কর্মস্থানে আপনার পজিশন কি ছিল ও কোন কোম্পানিতে কত বছর কাজ করেছেন এই সমস্ত কিছু বিস্তারিত লিখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় যাদের অভিজ্ঞতা বেশি তারাই ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক পান ।

* শিক্ষাগত যোগ্যতা (Academic Qualification)

এই অংশে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে। ডিগ্রির নাম, ফলাফল, প্রতিষ্ঠান, সময় কাল সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লিখতে হবে। নিচে উল্লিখিত নিয়মানুসারে তথ্য প্রদান করতে পারেন ।

* ডিগ্রির নাম (যেমন: SSC, HSC, BCom)

* কোর্স সময়কাল (কবে থেকে কবে)

* শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বোর্ডের নাম ৷

* পরীক্ষার বছর এবং প্রয়োজনে ফলাফল প্রকাশের সময় ৷

* ফলাফল/Result এবং যদি উল্লেখযোগ্য সাফল্য (যেমন: মেধাতালিকায় স্থান) থাকে তবে তার উল্লেখ করতে হবে ৷

আপনার যদি কোন ডিগ্রির চূড়ান্ত ফলাফল এখনও প্রকাশ না হয়ে থাকলে সেই ডিগ্রির উল্লেখ করার সময় ব্র্যাকেটে ‘Appeared’ উল্লেখ করতে হবে। কোন কোর্সে অধ্যায়নরত থাকলে ‘Ongoing’ উল্লেখ করতে হবে৷ কোন ডিগ্রির ক্ষেত্রে আপনার Result যদি খুব খারাপ হয়ে থাকে তবে কোন Result-ই উল্লেখ করার দরকার নেই ৷ মনে রাখবেন একটি ডিগ্রির ফলাফল উল্লেখ করা ও অন্যটি উল্লেখ না করা দৃষ্টিকটু ৷

* প্রশিক্ষন (Training)

যেসকল বিষয় বা কাজে আপনি ট্রেইনিং প্রাপ্ত সেগুলো বায়োডাটায় সুন্দর ভাবে উল্লেখ করতে পারেন। কারন নিয়োগকর্তা অভিজ্ঞ কর্মী নিয়োগ দিতে চান। তাই তার কাছে যাকে অভিজ্ঞ মনে হবে তাকে নিয়োগ দিবেন। আপনার ট্রেইনিং তথ্য উপস্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ।

* চাকরির অভিজ্ঞতা (Experience) 

এই অংশটিতে আপনার ক্যারিয়ার সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করতে পারেন। আপনি আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং কোথায় কাজ করেছেন সেটি সংক্ষিপ্ত আকারে লিখবেন । ৪-৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে থাকলে এই অংশটি আপনি ৫-৬ লাইনের ভিতরে লিখে শেষ করতে পারেন । কোম্পানি অবিজ্ঞতা চাইলে অবশ্যই এই অংশটি দিতে হবে।

* ভাষাগত দক্ষতা (Language Proficiency)

কোন কোন ভাষায় আপনি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বলতে ও লিখতে পারেন সেটি ভাষাগত দক্ষতায় উল্লেখ করতে পারেন। ভাষাগত দক্ষতা আপনাকে একধাপ এগিয়ে রাখতে পারে। তাই এই অংশে সংক্ষেপে আপনার ভাষাগত দক্ষতা উল্লেখ করতে হবে।

* ব্যক্তিগত তথ্য (Personal Information)

ব্যক্তিগত তথ্য বলতে নিজের তথ্য গুলো বোঝায়।  এই অংশে পিতামাতার নাম, বর্তমান/স্থায়ী ঠিকানা, জন্মতারিখ, ধর্ম, যে সকল দেশ আপনি ভ্রমণ করেছেন, শখ ইত্যাদি এখানে উল্লেখ করা হয়। বায়োডাটায় ব্যক্তিগত তথ্য হিসেবে যা যা দেওয়া যেতে পারে-

  • Father’s Name
  • Mother’s Name
  • Date of Birth
  • Gender
  • Marital Status
  • Nationality
  • National Id No.
  • Religion
  • Present Address
  • Permanent Address
  • Current location

*  রেফারেন্স (Reference)

বায়োডাটা বা জীবনবৃত্তান্ত এর শেষ অংশে রেফারেন্স দিতে হবে। মনে রাখতে হবে রেফারেন্স হিসেবে আত্নীয়দের নাম না দিয়ে আপনার শিক্ষক বা কর্মস্থলের সিনিয়রের নাম দেওয়া যেতে পারে।সাধারণত Reference হিসাবে সর্বোচ্চ ২-৩ জনের নাম উল্লেখ করাই শ্রেয় ৷ রেফারেন্স হিসেবে যার নাম দিবেন তার কাছ থেকে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। রেফারেন্স এ যা যা লেখা যেতে পারে-

  • Name :
  • Organization :
  • Designation :
  • Address :
  • Phone No :

* ছবি যুক্ত করাঃ

বায়োডাটায় আপনি যে ছবি ব্যবহার করবেন সেটি অবশ্যই সদ্য তোলা হতে হবে যেন আপনার চেহারা ভালো করে বোঝা যায়। ছবিটি ভালো করে তুলতে হবে কেননা ভালো ছবি আপনার উত্তম মন-মানুষিকতার পরিচয় বহন করে।

* স্বাক্ষর ও তারিখঃ

সর্বশেষ অংশে নিজের নামের ওপরে স্পষ্ট করে Signature (স্বাক্ষর) এবং তারিখ দিতে হবে। উপরের সবগুলো ধাপ ঠিকমত ফিলআপ করলে আপনার একটি পরিপূর্ণ বায়োডাটা বা সিভি রেডি হয়ে যাবে।

সিভি (CV) এবং রিজুউম প্রায় এক জিনিস হলেও এদের গঠনগত দিক থেকে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন, সাধারণত সিভি ২-৩ পাতার হয় কিন্তু রিজুউম সবসময় এক পাতায় হয়ে থাকে। সিভিতে বিভিন্ন বিষয়ে কিছু ব্যাখ্যা বা বর্ণনা দেওয়া হয় কিন্তু রিজুউমে সকল তথ্য খুব সংক্ষেপে লেখা হয়।Resume এ ডিজাইন অনেকটা এ্যাডভান্স লেভেলের হয়ে থাকে কিন্তু সিভি লেখার ক্ষেত্রে ডিজাইনের চাইতে ইনফরমেশনকে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়। যদিও আমাদের দেশে অধিকাংশ চাকরি বাকরির ক্ষেত্রে সিভি (CV) ও Resume একই অর্থে ব্যবহার হয়।

বায়োডাটা বা সিভি (CV) লেখার কিছু বর্জনীয় বিষয়সমূহের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবেঃ

  • বায়োডাটায় নিজের নাম অবশ্যই সার্টিফিকেট অনুযায়ী লিখতে হবে। এক্ষেত্রে ডাক নাম লেখার প্রয়োজন নেই এবং Mr/Mrs উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।
  • সার্টিফিকেট অনুযায়ী জন্ম তারিখ লিখতে হবে। একাডেমিক সার্টিফিকেটের সাথে জন্ম তারিখ মিলতে হবে।
  • পরিপূর্ণভাবে স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। যে ঠিকানায় আপনাকে পাওয়া যাবে।
  • নিজের একাধিক মোবাইল নাম্বার দিতে হবে এবং  প্রফেশনাল ইমেইল এড্রেস দিবেন।
  • পেশাগত দক্ষতা লেখার ক্ষেত্রে প্রফেশনালিজম দেখানোর চেষ্টা করতে হবে।
  • কোন ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য লিখার প্রয়োজন নেই (যেমন-বিবাহ, পরিবার, ছেলে ও মেয়ে)।
  • চশমা পরিহিত ছবি না দিয়ে চশমা ছাড়া সদ্য তোলা রঙ্গিন ছবি যুক্ত করতে হবে।
  • সিভি যেন কোনোভাবেই দুই পৃষ্ঠার বেশি না হয়। এক পৃষ্ঠায় শেষ করতে পারলে ভালো।
  • ভাষাগত দিক ঠিক রেখে নির্ভুল ভাবে বায়োডাটা বা সিভি লিখতে হবে।
  • কোন ধরনের ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না।

 

কোথায় বায়োডাটা লিখবেন?

বায়োডাটা বিভিন্ন ভাবে লিখতে পারেন। আপনি নিজে নিজে লিখতে পারবেন, আপনার ডেক্সটপ কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপে কম্পিউটারে Microsoft Office Word এ। এছাড়া ও অনলাইনে বায়োডাটা লেখার অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখান থেকে সহজেই বায়োডাটা লেখা সম্ভব। আপনি যেভাবেই লিখেন না কেনো বায়োডাটা লেখার নিয়ম অনুসরণ করে নির্ভুলভাবে লিখতে হবে।

 

দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলী এবং আবেদন পত্র লেখার নিয়ম

Interview Questions Bangla-ইন্টারভিউ বোর্ডের কমন প্রশ্ন – ৫০টি

ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি এবং ২৫টি কার্যকরী টিপস

চাকরি খোঁজার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ওয়েবসাইট- Bangladeshi Job website