fbpx
ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আলি আকবর খান

সনদ জালিয়াতি : ‘দায় এড়াতে পারি না’ বললেন সাবেক চেয়ারম্যান 

Last Updated on April 24, 2024 by Engineers

সনদ জালিয়াতির ঘটনায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান সঠিক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হারুন অর রশীদ। 

মঙ্গলবার ডিএমপির ডিবি কার্যালয়ে টানা প্রায় চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার দায় কোনোভাবেই সাবেক এই চেয়ারম্যান এড়াতে পারেন না।     

গোয়েন্দা পুলিশের হাতে স্ত্রীর গ্রেপ্তারের পর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া আলী আকবরও আলোচিত এ ঘটনায় নিজের দায় দেখছেন। 

স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করার তিন দিন পর গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ডাকে ডিবি কার্যালয়ে হাজির হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সেখানে প্রায় চার ঘণ্টা অবস্থান করেন। বেলা ৩টার দিকে তিনি বের হয়ে আসেন। 

 

অর্থের বিনিময়ে সনদ জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, “আমি এত বড় জালিয়াতির ঘটনার দায় এড়াতে পারি না। 

“বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে সনদ বাণিজ্যের দায় অবশ্যই আমি এড়াতে পারি না। তবে এ ঘটনার সাথে জড়িত নই।” 

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় আলী আকবরের স্ত্রী সেহেলা পারভীনসহ এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ বলছে প্রায় পাঁচ হাজার সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয় করেছে তারা। এসব সনদ নিয়ে কেউ চাকরি করছে, কেউ দেশের বাইরে চলে গেছে। 

গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে তিনজন আদালতে তাদের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। 

ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন বলেন, আলী আকবর খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার কাছে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। 

“আমরা ডিবির পক্ষ থেকে তাকে দুই দিনের সময় দিয়ে জবাব দিতে বলেছি। এই সময়ের মধ্যে তিনি যদি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন তা হলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুরো বিষয় নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এখন দেখার চেষ্টা করব তিনি আসলেই সনদ বিক্রির বিষয়টি জানতেন কি না? তার অবশ্যই জানার কথা। কেননা তিনি এক সময় কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। প্রশাসনিক বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। 

”এই ঘটনার মাধ্যমে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তার দায় অবশ্যই আছে বলে মনে করি।” 

আর্থিকভাবে চেয়ারম্যান জড়িত কি না তা তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করা হবে, বলেন তিনি। 

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, এসব কাজে চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অবহেলার বিষয়েও আলী আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এর আগে এ ধরনের জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হওয়ার পরও কেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল না সেই প্রশ্নের উত্তরও গোয়েন্দারা খুঁজছেন। 

আরেক প্রশ্নে হারুন বলেন, সিস্টেম এনালিস্ট শামসুজ্জামানের কাছ থেকে ওএসডি হওয়া বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে স্ত্রীর বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন আলী আকবর। 

জাল সার্টিফিকেটগুলো কারা কিনেছে, কোথায় বিক্রি করা হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হবে জানিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এজন্য বুয়েটের একটি পরীক্ষক দলের সহযোগিতা নেওয়া হবে। 

যা বললেন আলী আকবর খান 

ডিবি কার্যালয়ের বাইরে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্য ওএসডি হওয়া চেয়ারম্যান আলী আকবর খানের কাছে সনদ জালিয়াতির ঘটনায় তার স্ত্রীর কতটুকু সম্পৃক্ততা আছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। 

“আমি কিছুই জানি না। আমার স্ত্রীর বিষয়ে ডিবি কী পেয়েছে তাও জানি না। আমি মনে করি বিনা অপরাধে তাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে।” 

সিস্টেম এনালিস্টের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তার দাবি, তিনি টাকা নেননি। তথ্যটি সঠিক নয়। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। 

তবে এ ঘটনায় লজ্জিত এবং দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, একটি ঘটনা যেহেতু ঘটেছে। তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হবে। যারা জড়িত থাকবে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

এর আগে জাল সনদ ও নম্বরপত্র তৈরির একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী মোছা. সেহেলা পারভীনকে শনিবার উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *