fbpx
বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য। চীনের মহাপ্রাচীর। গ্রেট ওয়াল অব চায়না।

বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য। চীনের মহাপ্রাচীর। গ্রেট ওয়াল অব চায়না।

Last Updated on January 26, 2023 by Engineers

বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য। চীনের মহাপ্রাচীর। গ্রেট ওয়াল অব চায়না।

চীনের ভাষায় যাকে বলা হয় ছাং ছাং। মানব সৃষ্টি এই ছাং ছাং বা দীর্ঘ প্রাচীরটি তৈরি করতে চীনের সময় লেগেছিল ২২১ খ্রিস্টা-পূর্বাব্দ থেকে প্রায় ১৫ বছর। চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষা করার জন্য খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে ১৬শ শতক পর্যন্ত প্রাচীরটি তৈরি করা হয়। চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং এর অধীনে নির্মিত প্রাচীরটি সবচেয়ে বেশি খ্যাতি লাভ করে। চীনের মহা প্রাচীর কোনো একক প্রাচীর নয়। চীনের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন রাজবংশের অধীনে তৈরি প্রাচীরগুলো একত্রে পরিচিত ‘চীনের মহাপ্রাচীর’ বা ‘ গ্রেট ওয়াল অব চায়না ‘ যার অবস্থান প্রায় ১৫টি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত।

পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ স্থাপনা চীনের মহাপ্রাচীরের প্রথম স্থাপনাটি প্রায় ২৭০০ বছরের পুরোনো। এটি উচ্চতায় প্রায় ৫ থেকে ৮ মিটার উচু এবং লম্বায় প্রায় ৬৫৩২ কি. মি.। চলুন এই মহা স্থাপত্য সম্পর্কে কিছু জানা যাক।

চীনের মহাপ্রাচীরের ইতিহাসঃ এত বড় একটি স্থাপত্য নিমার্ণ করা হয়েছিল মূলত একটি গুজবের উপর ভিত্তি করে। শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করতে এই প্রাচীর তৈরি করা হয়। সম্রাট কিং রাজ্য জয়ের পর এক জাদুকর তাকে বলেছিল উত্তরের জাজাবরেরা কিং কে ক্ষমতা চ্যুত করবে। এই জাজাবরদের প্রতিহত করার জন্য খ্রিস্টপূর্ব ২২০ থেকে ২০০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে চীনের বেশ কিছু ছোট ছোট রাজ্যে নির্মিত দেওয়াল গুলোর মধ্যে সংযোগ করা হয়। তখন সেই ছোট ছোট প্রাচীর গুলো মহা প্রাচীরে পরিনত হয়। তবে বর্তমানে যে প্রাচীর গুলো দেখা যায় সেগুলো মিং রাজ শাসনামলে ১৩৮১ সালে প্রায় ৮,৮৫১ কি.মি. নির্মিত প্রাচীরসমূহ। এই প্রাচীর গুলো তৈরির মূল উউদ্দেশ্য ছিল বহিরাগত শত্রুদের থেকে সাম্রাজ্য রক্ষা করা। কোনো যায়গায় দুই বা তিন সারী পর্যন্ত দেওয়াল নির্মিত হয়েছে।
চীনের মহাপ্রাচীর নির্মানে ভূমিকা ছিল ২০ টি রাজ বংশের। প্রতিটি রাজ বংশের শাসনামলে এসব প্রাচীর নির্মাণ, সংযোজন, পরিবর্তন ও পুননির্মাণ করা হয়েছে। এই স্থাপত্য নির্মাণের জন্য প্রায় ১০ লক্ষের অধিক শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়। প্রাচীর গুলো তৈরি করার সময় ৪ লক্ষের বেশি শ্রমিক মারা যায় যার অধিকাংশের সমাধি দেওয়া হয় এসব দেওয়ালের মধ্যে। তাই এই দীর্ঘ প্রাচীরকে দীর্ঘ মানব সমাধি ও বলা যায়।
কয়েক হাজারের বেশি সময় ধরে নির্মিত এই প্রাচীরের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ২১,১৯৬ কি.মি. যেটি পৃথিবীর বিষুবরেখার অর্ধেকেরও বেশি। এই মহাপ্রাচীরের সর্বোচ্চ উচ্চতা প্রায় ৪৬ ফুট। এটি সাধারণ কোনো প্রাচীর নয়। এতে ছিল দূর্গ, সেনানিবাস, প্রশাসনিক কেন্দ্র, আভ্যন্তরীণ পথ সহ সুবিধাজনক অবকাঠামো।
চীনের উত্তর দিকটি ছিল অরক্ষিত। তাই উত্তরের হান উপজাতিতের বিরুদ্ধে প্রথম স্তরের নিরাপত্তা দেওয়াল নির্মিত হয়েছিল। শত্রুদের প্রতিহত করতে এই প্রাচীর কার্যকরী ব্যাবস্থা হলেও মঙ্গোল বাহিনীকে প্রতিহত করতে পারেনি। মঙ্গোলদের প্রতিহয় করার জন্য প্রাচীরের দেওয়ালের উপর প্রায় ২৫০০০ টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হলেও মঙ্গোলদের থামানো সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে এই মঙ্গোল বাহিনী ১০০ বছর এই প্রাচীর নিয়ন্ত্রণ করে।
১৮৬০ সালে ২য় অপিয়াম যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর চীনের সীমানা বিদেশিদের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হলে এর পরিচিতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

চীনের মহাপ্রাচীরের বর্তমান অবস্থাঃ চীনের মহাপ্রাচীরের তিন ভাগের একভাগ অংশ প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে চীনের মহাপ্রাচীরের যে অংশসমূহ টিকে আছে তার অধিকাংশই মিন রাজবংশের আমলে তৈরি। পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র গুলো সে সময়ে তৈরি করা হয়েছিল। বেইজিংয়ের উত্তর দিকে এবং পর্যটন কেন্দ্রের আশে পাশের অংশ সংরক্ষিত করা হয়েছে। লাইয়াওনিং এবং হেবেই প্রদেশের বর্ডারের কাছে দেওয়াল গুলো ২০১৪ সালে কংক্রিট দিয়ে সংস্কার করা হয়। ধারণা করা হয় আগামী ২০ বছরের মধ্যে এই মহাপ্রাচীরের অধিকাংশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

লোকমুখে কথিত আছে চীনের এই মহাপ্রাচীরকে চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহ থেকে দেখা যায় যেটি সম্পূর্ণ ভুল। দ্য গ্রেট ওয়াল অব চায়না শুধু মাত্র চীনেরই গৌরব নয়, এটি সমগ্র বিশ্বের গৌরব। তাই এই গৌরবময় প্রাচীর সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়ার আগেই এর সংস্কার করে বিশ্বের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে।