fbpx
E-bike

ই-বাইকের বিক্রি বহুগুণ বেড়ে গেছে

Last Updated on January 26, 2023 by Engineers

মহামারির সময় ই-বাইকের(E-bike) বিক্রি কীভাবে বহুগুণ বেড়ে গেছে

জ্বালানি নির্ভর যানবাহনের তুলনায় পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে ভ্রমণ করলে যে আমরা শারীরিক ভাবে এবং পরিবেশগত ভাবে অনেক বেশি উপকৃত হই, সেটা অনেক আগে থেকেই জানি। যদিও আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ ব্যাপারটাকে সেরকম গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু করোনা (COVID-19) নামক বৈশ্বিক মহামারীর কল্যাণে আগের তুলনায় আমরা আমাদের শরীর ও পরিবেশের প্রতি অনেক বেশি সচেতন হয়েছি। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের প্রবল ভিড় এড়িয়ে সাইকেলে সফর (cycling) করার জন্য সংবাদ মাধ্যম এবং সরকারের তরফ থেকে নিয়মিত প্রচার করা হয়েছে। এসবেরই সম্মিলিত কারণে ই-বাইকের (e-bike) বিক্রি বেড়েছে হু হু করে।

যুক্তরাজ্যে (UK) মেদবহুলতা (obesity) এবং করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার মধ্যে সংযোগ খুঁজে পাওয়ার পর চিকিৎসকেরা রোগীকে সুস্বাস্থ্য ফিরে পাওয়ার জন্য সাইকেলে সফর করার দাওয়াই দিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক মানুষ আছেন, যারা নিয়মিত সাইকেল ব্যবহার করার কারণে শরীরের ওজনকে দুর্দান্ত ভাবে কমিয়ে ফেলতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন। করোনারি হার্টের অসুখকে (coronary heart disease) প্রতিরোধ করতে নিয়মিত সাইক্লিং-এর অবদানের কথা চিকিৎসক মহলে আজ প্রায় সর্বস্বীকৃত।

ই-বাইকের সুবিধা:

সেই ১৯৯৮ সাল থেকে যদিও বাইসাইকেলের বিক্রি বেড়ে চলেছে, সাইকেল নির্মাতা ও বিক্রেতারা সাম্প্রতিক ২০২০ সালে বাইসাইকেলের বিক্রি মাত্রাতিরীক্ত ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও বেশি দূরত্ব যাওয়ার জন্য এই সাবেকী সাইকেলগুলি উপযুক্ত ছিল না। তাছাড়া যাদের শারীরিক সমস্যা আছে বা যারা পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাস করছেন, তাদের জন্য আমাদের অতি-পরিচিত এই সাইকেলগুলি অসুবিধাজনক ছিল। আর মানুষের এই সমস্যাগুলির কথা মাথায় রেখেই বাইসাইকেল বা বাইক নির্মাতারা বাজারে নিয়ে এসেছে ই-বাইক, যেখানে পায়ের দ্বারা প্যাডেল করার সাথে সাথে বিদ্যুৎচালিত রিচার্জেবেল ব্যাটারীর দ্বারা অনায়াসে ঘন্টায় ২৫-৫০ কিলোমিটার বেগে ভ্রমণ করা যাবে। কোনো কারণে যদি ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়েও যায় বা কোনো যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়, খুব সহজে বাকি রাস্তাটুকু আমরা প্যাডেল করে পেরিয়ে যেতে পারবো। এইসব সুবিধার কারণে ই-বাইকের বিক্রি প্রতিদিন বেড়েই চলেছে, আর নির্মাতারা ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তাছাড়া মোটর বাইক বা মোটর সাইকেলের তুলনায় এর দামও অনেক কম (২৫-৩৫ হাজারের মধ্যে ভারত বা বাংলাদেশে একটি ভালো মানের ই-বাইক পেয়ে যাবেন) এবং পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনাও এতে অনেক অনেক কম। ভারত এবং বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে ই-বাইক চালানোর জন্য লাইসেন্স প্লেটেরও কোনো প্রয়োজন নেই। ই-বাইক ব্যবহারকারীদের মধ্যে পথদুর্ঘটনার স্বীকার হওয়ার সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

ই-বাইকের পরিবেশ বান্ধবতা:

ই-বাইক কে zero-emissions vehicles-এর মধ্যে ধরা হয়, যেহেতু এটি বাই-প্ৰডাক্ট হিসেবে দহনজাত কোনো দূষক পদার্থ পরিবেশে নির্গমণ করে না। আগামী দিনে বিদ্যুৎ নির্ভর ব্যাটারীকে পরিহার করে সৌরশক্তির মাধ্যমে বা অন্যান্য renewable energy-এর মাধ্যমে ব্যাটারিকে চার্জ দেওয়ার সুবিধা দিতে পারলে ই-বাইকের পরিবেশ বান্ধবতা আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় ই -বাইকের পরিবেশগত প্রভাবের কথা যাচাই করতে গিয়ে সাম্প্রতিক একটি স্টাডি জানাচ্ছে:
• একটি ই-বাইক একটি SUV-এর তুলনায় ১৮ গুণ বেশি শক্তি সাশ্রয় (energy efficient) করে।
• একটি ই-বাইক একটি সেডান (sedan)-এর তুলনায় ১৩ গুণ বেশি শক্তি সাশ্রয় (energy efficient) করে।
• এবং একটি ই-বাইক একটি সাবেকী বাইসাইকেলের প্রায় সমান প্রভাব ফেলে পরিবেশের উপর।

ই-বাইকের জনপ্রিয়তা:

এই মুহূর্তে ই-বাইক তৈরীতে বিশ্বকে নেতৃত্বদান করছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন। চৈনিক বাইসাইকেল সমিতির (China Bicycle Association) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০৫-এ চীনে ১ কোটিরও বেশি বাইক বিক্রি হয়েছে, যা ২০০৯-এ ২ কোটি ছাপিয়ে গেছে।
অন্যদিকে ইউরোপে ২০০৯ -এ ৫ লক্ষেরও বেশি বাইক বিক্রি হয়, যা ২০১৬-তে ২০ লক্ষ ছাপিয়ে গেছে। ইউরোপে ট্রান্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে ই-বাইকের জনপ্রিয়তা দ্রুততর থেকে দ্রুততমের দিকে এগিয়ে চলেছে। ২০১৮-তে জার্মানীতে যত বাইক বিক্রি হয়েছে তার মধ্যে ই-বাইকের সংখ্যা ২৩.৫%. আবার নেদারল্যান্ডে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যত বাইক বিক্রি হয়েছে, তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছিল ই-বাইক।

ই-বাইকের ভবিষ্যৎ( e-bike future):

ক্যান্সার, ডায়াবেটিস বা হার্টের অসুখে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের জন্য শারীরিক অনুশীলন করা খুব প্রয়োজন, কিন্তু শারীরিক দুর্বলতার কারণে তা করতে তাঁরা অপারগ, তাদের জন্য ই-বাইক একটি অনন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে। কল্পনা করতে খুব ইচ্ছে হয়– অদূর ভবিষ্যতে এইসব রোগের নিরাময়ের জন্য খরচবহুল, যন্ত্রণাবহুল, এবং অনিশ্চিত চিকিৎসা পদ্ধতির পরিবর্তে (অথবা এর সাথেই) চিকিৎসকেরা তাঁদের প্রেসক্রিপশনে ই-বাইকের মাধ্যমে শরীরচর্চা করতে পরামর্শ দিচ্ছেন, আর অসুস্থ মানুষেরা আবার তাদের হারিয়ে যাওয়া সুস্থ-সুন্দর জীবন ফিরে পাচ্ছেন।
আর এটুকুতো নিশ্চিত যে জ্বালানী চালিত যানবাহনগুলি যদি আমরা আস্তে আস্তে বিসর্জন দিয়ে ই-বাইকের মাধ্যমে যাতায়াত করতে পারি, শব্দ দূষণ তথা পরিবেশ দূষণ তথা শক্তির অপচয় অনেক অনেক কমে যাবে। ছোটবেলায় বয়স্কদের কাছে একটা কথা শুনতাম যে প্রতিটি অমঙ্গলের মধ্যেও, প্রতিটি অশুভ ঘটনার মধ্যেও কিছু না কিছু মঙ্গল, কিছু না কিছু শুভ ঘটনা লুকিয়ে থাকে। তাই আজ বুঝতে পারি– COVID-19, করোনা ভাইরাস, বা করোনা মহামারীর জন্য অনেক মৃত্যু, অনেক আর্থিক অনিশ্চয়তা, অনেক ক্ষয়-ক্ষতি ঘটে গেলেও, ই-বাইকের মতো কোনো মাধ্যমকে আশ্রয় করে যদি আমরা আমাদের সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে পারি, যদি একটি নির্মল পরিবেশ প্রকৃতিকে উপহার দিতে পারি, তাহলে সোনালী ভবিষ্যৎ আমাদের সকলের জন্য দোরগড়ায় অপেক্ষা করছে।

অতএব, আপনারা যদি অল্প খরচের মধ্যে পরিবেশ বান্ধব ই-বাইক (eco-friendly and low-cost e-bike) কেনার কথা ভাবছেন, তাহলে আপনাদের সেই সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানাই।

সেরা 20 প্রযুক্তি ওয়েবসাইট এবং ব্লগ

কংক্রিট তৈরির সেকাল একাল

কাউ মিল্ক উইথআউট কাউ